/ সারাদেশ / যে মেয়ে বিতর্কিত শেখ মুজিবের বায়োপিক ছবিতে অভিনয় করেছে তার স্বামীকে উপদেষ্টা বানিয়েছে : রিজভী
যে মেয়ে বিতর্কিত শেখ মুজিবের বায়োপিক ছবিতে অভিনয় করেছে তার স্বামীকে উপদেষ্টা বানিয়েছে : রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক, নোয়াখালী :
|
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, যে মেয়েটি বিতর্কিত শেখ মুজিবের বায়োপিক ছবিতে অভিনয় করেছে আপনারা তার স্বামীকে উপদেষ্টা বানিয়েছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে নতুন উপদেষ্টা বানানোর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আপনি আবার নতুন কিছু উপদেষ্টা করেছেন। নতুন উপদেষ্টা করার অধিকার আপনার আছে। কিন্ত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশীজন যারা তাদেরতো একটা অভিমত নেওয়া দরকার ছিল। মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় নোয়াখালীর চৌমুহনী রেলওয়ে ময়দানে আয়োজিত জনসমাবেশে প্রধান অতিথির ব্ক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। বেগমগঞ্জ উপজেলা, চৌমুহনী পৌরসভা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ঐতিহাসিক ৭নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে এই কর্মসূচির আয়োজন করেন। সমাবেশের উদ্বোধন করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্যাহ বুলু। রুহুল কবির রিজভী অন্তর্ববর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন,নির্বাচনের ডেটলাইন দিতে আপনাদের মধ্যে এতো দ্বিধা এতো সংকোচ কেন। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের চেতনাকে ধারণ করতে পারছেননা। তাই স্বৈরাচারের আরেক লোককে আপনারা বসিয়ে রেখেছেন। আপনারা বিভিন্ন জায়গায় স্বৈরাচারের দোসরদের বসিয়ে রেখেছেন। তারাতো আপনাদেরকে ব্যর্থ করবেই। অন্তর্বর্তী সরকারে বিএনপির সমর্থ রয়েছে বলে রিজভী বলেন, আপনি জনগণের সমর্থন নিয়ে আপনারা সরকার হয়েছেন। আপনাকে বিএনপি সমর্থন করেছে। যারা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছে তারা সমর্থন দিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা সমর্থন দিয়েছে। আমরাতো আপনাদেরকেই সমর্থন করে যাচ্ছি। কিন্তু মাঝে মাঝে কথা বলতে হয় কেন? রিজভী আরও বলেন, আলুর কেজি কেন হবে ৭৫-৮০ টাকা। আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেননা কেন? আপনি সিন্ডিকেটবাজদের কেন গ্রেপ্তার করতে পারছেনান। দুর্বলতা কোথায় এটা একটু জানতে চাই। এটাতো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে মানুষের কাম্য নই। কেন এটা বাড়ছে,মানুষতো অনেক ধরনের প্রশ্ন করে। অন্তর্বর্তী সরকারেক উদ্দেশ্য করে রিজভী আরও বলেন, আপনি নির্বাচনের কথা বলেন, কিন্ত নির্বাচনের কোন ডেটলাইন দেননা। কিন্ত এটা কেন? এটাতো রহস্যজনক। আপনারা সংস্কার করবেন। সবাই মনে করে অন্তবর্তীকালীন কি, স্কুলের হেডমাস্টার। আপনারা সংস্কারের একটা পাট দিবেন। সেটা তৈরী করে, সিলেবাস তৈরী করবেন, সিলেবাস তৈরী করে রাজনৈতিক দল গুলোকে আগে শিখাবেন? মনে হচ্ছে এটা তাদের ইচ্ছা। তারা এখন স্কুলের হেডমাস্টার বা শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। আপনারা মনে করছেন বিএনপির লোক যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আছে, তারা অশিক্ষিত। আমরা তোমাদেরকে আগে সংস্কার শিখাই, সংস্কার শিখাই,তারপর তোমরা নির্বাচনের কথা বল। এক উপদেষ্টার বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, তাদের একজন উপদেষ্টা বলছে, খালি নির্বাচন, নির্বাচন করলে হবে। উপদেষ্টাকে বলি আপনি কি হেডমাস্টার। আপনি আগে শিক্ষা দিবেন তারপর আমরা শিখব,পড়াশুনা করব। আমরা কি জানিনা সংস্কার কি। আপনারা প্রস্তাব দিতে পারেন। সেই প্রস্তাবটা দেবেন নির্বাচিত সরকারে কাছে। এজন্য নির্বাচন দিন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, সারা দেশের মানুষ জেগে উঠেছে বলেই হাসিনার মত এত নির্মম, নিষ্ঠুর, এত রক্ত নিংড়ানো একটি স্বৈরাচারকে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে মনে করেছে তার বাপের জমিদারি। আর এই জমিদারি রক্ষার্থে সে দেশের জনগণকে জনগণ মনে করতনা। চাকর-বাকর মনে করত। জনগণকে চাকর-বাকর মনে করত বলে যারা প্রতিবাদ করেছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় বক্তব্য রেখেছে,যারা মিছিল করেছে, জনসভা করেছে, স্লোগান দিয়েছে তাদেরকে সে শান্তিতে থাকতে দেয়নি। কাউকে অদৃশ্য করে দিয়েছে চিরদিনের জন্য, কাউকে বিচার বর্হিভূত হত্যার শিকার করিয়েছে। এই দানবকে বাংলােদেশর ছাত্ররা বিতাড়িত করেছে। শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের উদ্ধৃতি টেনে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বাপের বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়িতে (ভারত) আপনি কি কি নিয়ে গেছেন। অভিযোগ করে বলেন, ভারতের আদানির সাথে বিদ্যুতের অস্বাভাবিক দামে চুক্তি করেছে শেখ হাসিনা সরকার। যারা বিদ্যুতের সিন্ডিকেট করেছে,বাজারে বিভিন্ন ভাবে সিন্ডিকেট করেছে। সেই সিন্ডিকেটের টাকা কি আপনি আপনার স্বামীর বাড়িতে নিয়ে গেছেন। এটা জনগণের জিজ্ঞাসা, এটাই জনগণ আজকে জানতে চায়। আমরা বিদ্যুতের টাকা পাচার হওয়ার কথা শুনেছি, মেট্রোরেলের টাকা পাচার হওয়ার কথা শুনেছি। মেগা প্রজেক্টের অর্থ আত্মসাৎ হওয়ার কথা শুনেছি। আপনি দুর্নীতি করে নিজের লোকদের মধ্যে টাকা ভাগ করে টাকা গুলো পাচার করে দিয়েছেন। যার খেসারত জনগণকে দিতে হচ্ছে, অন্তর্বর্তীকালী সরকারকে দিতে হচ্ছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ১/১১ পর হাসিনা তিনটি নির্বাচন অবৈধভাবে দিয়েছে। সবগুলো অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে সে অবৈধ ক্ষমতা জবর দখল করে রেখেছিল। গত ১৬ বছর মানুষের গনতন্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। এই আন্দোলনে আমাদের ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গুম করেছে। ২৪ এর ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগষ্ট পর্যন্ত আমাদের ৪শত ২২ জন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ৬৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে ১৫০ টি ও রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে ৪৫০ টি মামলা রয়েছে। শেখ মুজিব ১৯৭১ সালে একদলীয় বাকশাল কায়েম করে সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেছিল। এতে করে অন্য সকল রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসার পর রুদ্ধ হয়েছিল। তাই ১৫ ই আগষ্ট আসা অনিবার্য ছিল। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এডভোকেট আব্দুর রহিম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আব্দুর রহমান, এডভোকেট এবিএষম জাকারিয়া, জেলা বিএনপির সদস্য শামীমা বরকত লাকী, সভা সঞ্চালনা করেন চৌমুহনী পৌরসভা বিএনপির সভাপতি জহির উদ্দিন হারুন, সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাক্ষ্যা চন্দ্র দাস। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো.মাহফুজুল হক আবেদ, চৌমুহনী পৌরসভা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো.মহসিন আলম, সহ সভাপতি মোরশেদুল আমিন ফয়সাল, উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি হাজী আবুল কাশেম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ, যুবদল নেতা রুস্তম আলী সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে আন্দোলন সংগ্রামে নিহত ও আহত নেতাকর্মিদের মাঝে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও রুহুল কবির রিজভী সহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। |