/ আন্তর্জাতিক / হানিয়া হত্যাকাণ্ড : স্ত্রী, ছেলে ও পুত্রবধূর আবেগঘন বার্তা
হানিয়া হত্যাকাণ্ড : স্ত্রী, ছেলে ও পুত্রবধূর আবেগঘন বার্তা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
|
কাতারের রাজধানীর উত্তরে অবস্থিত লুসাইল রয়াল কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়াকে। এর আগে শুক্রবার (২ আগস্ট) দেশটির সবচেয়ে বড় মসজিদ দোহার ইমাম মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়ার ছেলের স্ত্রী তেহরানে তাকে হত্যার পর শোক জানিয়ে একটি রেকর্ড করা ভিডিও প্রকাশ করেছেন। ভিডিওতে হানিয়ার পুত্রবধূ এনাস হানিয়া বলেছেন, ‘আমি এমন একজন ব্যক্তির জন্য শোক করছি, যার নাম পৃথিবী জানে তেমনি স্বর্গেও পরিচিত। তিনি এমন একজন ব্যক্তি যার পরিচয়ের প্রয়োজন নেই। আমি আমার চাচা, আমার প্রিয় বাবা, আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষের জন্য শোক করছি। চাচা আবু আল-আবেদ হানিয়া আমার চোখের আলো, তিনি তার তাজা রক্ত দিয়ে শহীদদের কাতারে নাম লিখিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ‘তাকে আমরা মহান, বীরত্বপূর্ণ এবং মহৎ একজন শহীদ বলতে পারি, যা শুনে ঈশ্বর খুশি হন। আমার চোখে অশ্রু ঝরছে, হৃদয় ব্যথিত এবং আমরা আপনার প্রয়াণে গভীরভাবে শোকাহত। আবু আল-আবেদ আপনি আমাদের পিতা। তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে আমরা ঈশ্বরের এবং তাঁর কাছেই আমরা ফিরে যাব। হে আল্লাহ আমাদের বিপদে ধৈর্য্য দান করুন। এ ক্ষতি অপরিসীম। কিন্তু আমাদের সান্ত্বনা এটাই যে, এই পৃথিবী ক্ষণস্থায়ী এবং আমরা আবার সেই স্বর্গে মিলিত হওয়ার আশা করছি। বিদায় হে জাতির নেতা। হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্রও তার পিতার জন্য শোক প্রকাশ করে একটি হৃদয়বিদারক ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন। সেই ভিডিওতে তিনি বলেছেন, ‘তার বাবার জীবন গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার শিকার হাজার হাজার ফিলিস্তিনিদের জীবনের চেয়ে বেশি মূল্যবান নয়। আবদেল সালাম হানিয়া আরো বলেন, ‘আমার বাবার রক্ত গাজার শিশু বা পুরুষদের রক্তের চেয়ে বেশি মূল্যবান নয় এবং আমাদের অশ্রু শহীদদের মা ও শিশুদের কান্নার চেয়ে বেশি মূল্যবান নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা দখলদারদের (ইসরায়েল) বলছি, তোমরা যতই হত্যা কর না কেন, ফিলিস্তিনি জনগণের অগ্রযাত্রা ও বিপ্লব থামাতে পারবে না। নেতাদের প্রতিটি হত্যা প্রচেষ্টা আমাদের জনগণ এবং ইসলামী বিশ্বের জন্য একটি নতুন বিপ্লবকে পুনরুজ্জীবিত করবে। তিনি আরো যোগ করে বলেন, ‘আমার প্রয়াত পিতার ইচ্ছা ছিল, সর্বদা জাতীয় ঐক্য অর্জন, গাজার ওপর আক্রমণ বন্ধ করা এবং আমাদের জনগণের জন্য বিজয় অর্জন করা। আমার বাবা শৈশব থেকেই প্রতিরোধ, বিপ্লব ও সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছেন।’ আবদেল সালাম বলেন, ‘তার বাবাকে অসংখ্যবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। কাতারে দাফনের আগে হানিয়ার স্ত্রী হানিয়ার কফিন জড়িয়ে বলেন, ‘আমার প্রিয় আমার একমাত্র সমর্থক, গাজার শহীদদের আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাবেন। সবাইকে এই শুভেচ্ছা জানাবেন, ছোট শিশু থেকে বড় সবাইকে। তিনি আরো বলেন, ‘শহীদ নেতা শেখকে ( আহমেদ ইয়াসিন) আমার শুভেচ্ছা জানাবেন, গাজার সকল শহীদের শুভেচ্ছা জানাবেন। আমার প্রিয়, আশা করি আল্লাহ আপনার ওপর সন্তুষ্ট থাকবেন এবং আপনাকে ক্ষমা করবেন। গতকাল ৩১ জুলাই ইরানের রাজধানী তেহরানের একটি বাসভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তিনসহ তার একজন দেহরক্ষী নিহত হন। ইরানা এবং হামাসের দাবি ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের মদতে তাকে হত্যা করেছে। তবে উভয় দেশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ১৯৪৮ সালের নাকবাতে ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন থেকে বহিষ্কৃত শরণার্থীদের একটি পরিবারে জন্ম নেওয়া হানিয়া উত্তর গাজার আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে বেড়ে ওঠেন। ১৯৮৭ সালে যখন হামাস প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন তিনি গোষ্ঠীর তরুণ প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে একজন ছিলেন।- মিডিলইস্ট আই মনিটর |