বুধবার ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
 / জাতীয় / টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী
টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশ: বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪, ৪:০৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী

টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন যা টেকসই উন্নয়নের মূল উপাদান। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে তাদের জনসম্পদে রূপান্তর করতে হবে। তিনি আজ রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ‘আইসিপিডি-৩০: জনসংখ্যাগত বৈচিত্র্য ও টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক বৈশ্বিক সংলাপ’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী ইভেন্টের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণে এ কথা বলেন।

বাংলাদেশ, বুলগেরিয়া এবং জাপান ও ইউএনএফপিএ’র সাথে একত্রে এই অনুষ্ঠানের আয়োজক। এই সংলাপ পরিবর্তনশীল জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জগুলো এবং সুযোগগুলো খুঁেজ বের করে আলোচনার বিশ্বের একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনসংখ্যাগত লভ্যাংশের রূপান্তর একটি সমৃদ্ধ বৈশ্বিক ব্যবস্থা তৈরি করতে সক্ষম হবে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই লক্ষ্য অর্জনে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা বিশেষ করে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা খাতে আন্তর্জাতিক অর্থায়নের পরিমাণ ও সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করার জন্য উন্নয়ন সহযোগী ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও আন্তরিক হতে হবে।

সরকার প্রধান বলেন, ঢাকায় অনুষ্ঠিত এই বৈশ্বিক সংলাপ সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ জাতিসংঘে অনুষ্ঠেয় ‘সামিট অব দ্যা ফিউচার’-এর জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নে সহায়ক হবে। জনসংখ্যা ও উন্নয়ন বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ‘সামিট অব দ্যা ফিউচার’-এর ঘোষণাপত্রে দৃঢ় রাজনৈতিক প্রত্যয় ব্যক্ত করবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। শেখ হাসিনা ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য অপরিহার্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার আরও কার্যকর ভূমিকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সেখানে মানুষ ইসরায়েলি আগ্রাসন ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিদিন বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করি জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা সেখানে সকলের বিশেষ করে নারী ও শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।’তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে জনস্বাস্থ্যসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে বিশ্বের সকল মানুষের বিশেষ করে মা, শিশু ও বয়স্ক জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বৈশ্বিক সহযোগিতা আরও জোরদার করতে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

সরকার প্রধান আরো বলেন, ‘একইসঙ্গে সংঘাত ও রাজনৈতিক কারণে উপদ্রুত ও বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর দিকে মনোযোগ দেওয়াও অত্যন্ত জরুরী বলে আমি মনে করি। এই সময় তিনি মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারি রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই-বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং ইসরায়েলের গণহত্যা ও আগ্রাসনের ফলে নিপীড়িত ফিলিস্তিনি জনগণের কথা। বিপুল সংখ্যক নারী ও শিশু ফিলিস্তিনে আজ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ইউএনএফপি’র নির্বাহী পরিচালক ড. নাতালিয়া কানেম, মালদ্বীপের সামাজিক ও পরিবার উন্নয়ন মন্ত্রী আইশাথ শিহাম, কিরিবাতির নারী, যুব, ক্রীড়া ও সামাজিক বিষয়ক মন্ত্রী মার্টিন মোরেত্তি, জাপানের পররাষ্ট বিষয়ক সংসদীয় উপ-মন্ত্রী ইয়াসুশি এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন । বুলগেরিয়া সরকারের প্রতিনিধিও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

দেশের স্বাস্থ্য খাতে তাঁর সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ২০০৯ সালে জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে পুনরায় সরকার পরিচালনার দায়িত্বে আসার পর আমরা ‘আইসিপিডি প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন’-এর ১৫টি মূলনীতি বাস্তবায়নে জাতীয় জনসংখ্যা নীতি-২০১২ প্রণয়ন করি। মাতৃমৃত্যু ও নবজাতক মৃত্যুহার হ্রাস, মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা, শিশু ও কিশোর-কিশোরী প্রজনন স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদানে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করি।

স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোড়গোড়ায় নিয়ে আসতে তাঁর সরকারের চালু করা কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর মাধ্যমে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবাসহ ৩০ প্রকারের প্রয়োজনীয় ওষুধ বিনামূল্যে বিতরন করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় তিন হাজার ক্লিনিকে ‘স্কিলড বার্থ এটেনডেন্স’ সেবা প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে সারা দেশে সাড়ে ১৪ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। এছাড়াও, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীন ৩ হাজার ২৯০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র/পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক হতে মা, শিশু ও বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এরমধ্যে, ২,২০০টি কেন্দ্র হতে সার্বক্ষণিক স্বাভাবিক প্রসব সেবা প্রদান করা হচ্ছে। প্রসূতিসেবা প্রদানের জন্য এসব কেন্দ্রে ৪ জন করে ধাত্রী নিয়োগের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ২০ হাজার ধাত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ৩ হাজার মিডওয়াইফারি প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, মা ও শিশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণ এবং শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের জন্য ‘মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ১৩ লাখ উপকারভোগীকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি কর্মস্থলে ‘শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র’ স্থাপনের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরফলে বর্তমানে বাংলাদেশে শিশুমৃত্যু হার প্রতি হাজারে ২১ জন। যা ২০০৬ সালে ছিল হাজারে ৮৪ জন। একইভাবে মাতৃমৃত্যু হার প্রতি লাখে ২০০৬ সালের ৩৭০ জন থেকে ১৩৬ জনে হ্রাস পেয়েছে।

বাল্য বিবাহ, যৌতুক ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই, উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের মেয়েদের কেবল ভুক্তভোগী হিসেবে না দেখে তাদের পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে আমরা ১ হাজার ২৫৩টি ইউনিয়ন পর্যায়ের সেবা কেন্দ্রে কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা কর্নার প্রতিষ্ঠা করেছি। পাশাপাশি ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত প্রায় ৫০ লাখ কিশোরীকে বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ এবং স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের পুষ্টি চাহিদা পূরণে দেশব্যাপী ‘স্কুল মিল’ চালু করা হয়েছে।

২০১০ সাল থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের বিশ্বের সর্ববৃহৎ কর্মসূচি চালুর অংশ হিসেবে ২০২৪ পর্যন্ত প্রায় ৪৬৪ কোটি বই বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানান সরকার প্রধান। উপরন্তু নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত উপবৃত্তি ব্যবস্থা চালু এবং দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার জাতীয় বাজেটের মোট ৩০ শতাংশ নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য বরাদ্দ রেখেছে। বেইজিং ঘোষণা ও কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ও জাতীয় কর্মসূচি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।  

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের শ্রম শক্তির ৪২ দশমিক ৬ শতাংশ নারী, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। আইসিটি খাতে ২০২৬ সালের মধ্যে ২৫ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ’ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট-২০২৩’ অনুযায়ী রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বের ১৪৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম এবং এই অঞ্চলে প্রথম। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারী প্রতিযোগীদের অংশগ্রহণ আগের সাধারণ নির্বাচনের তুলনায় ৩৮ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি ছিল।




সর্বশেষ খবর
শহীদ জিয়া নিজে কোদাল নিয়ে কৃষকের সাথে কাজ করেছেন : মোঃ শাহজাহান
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের নতুন আরএমও ডা: কাজী সানজিদা হক
জ্বালানি খাতকে টেকসই ও গুণগত মানসম্পন্ন করতে কাজ করছে সরকার : পরিবেশ উপদেষ্টা
দুদকের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের আয় ও সম্পদের হিসাব প্রকাশের আহ্বান টিআইবির
আলুর দাম বাড়লেও অন্যগুলো সাশ্রয়ী হয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা
সর্বাধিক পঠিত
আ.লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারে না অন্তর্র্বতী সরকার : জিএম কাদের
ঘিওরে বিএনপি'র দুই গ্রুপের সংঘর্ষে সাবেক ছাত্রদল নেতা লাভলু নিহত
সিরিয়ায় অবস্থানরত সৈন্যদের যে বার্তা দিলো মস্কো
মুরাদনগর উপজেলা বিসিএস ক্যাডার অফিসার্স ফোরাম এর সভাপতি মাহমুদুল এবং সম্পাদক নূরুল হক
আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি ৭ দিনের রিমান্ডে
আরও দেখুন...

Copyright © 2024
All rights reserved
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর: মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জিটু
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : প্ল্যানার্স টাওয়ার, ১০তলা, ১৩/এ বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, বাংলামটর, শাহবাগ, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮-০২-৪১০৬৪১১১-১৪, ফ্যাক্স: +৮৮-০২-৯৬১১৬০৪, হটলাইন: +৮৮-০১৯২৬৬৬৭০০৩-৪, ই-মেইল : [email protected], [email protected], [email protected]
Website: http://www.dainikbanglabd.com
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর: মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জিটু
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : প্ল্যানার্স টাওয়ার, ১০তলা, ১৩/এ বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, বাংলামটর, শাহবাগ, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮-০২-৪১০৬৪১১১-১৪, ফ্যাক্স: +৮৮-০২-৯৬১১৬০৪, হটলাইন: +৮৮-০১৯২৬৬৬৭০০৩-৪, ই-মেইল : [email protected], [email protected], [email protected]